Monday, April 26, 2010

এক ঝলকে

বড় আনন্দের কথা, সমস্ত রাজ্য আর কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল মিলে per capita income - এ পশ্চিমবঙ্গের স্থান ষোলো নম্বরে। আমাদের নীচে আছে ত্রিপুরা, উত্তরাঞ্চল, অরুণাচল প্রদেশ,মেঘালয়, মণিপুর, ছত্তিসগড়, ঝাড়খন্ড,আসাম, রাজস্থান, মধ্যপ্রদেশ, উত্তরপ্রদেশ, বিহার। তবে এ হল ২০০৫-২০০৬ সালের পরিসংখ্যান। Population Density -এর দিক দিয়ে দেখলে রাজ্যগুলির মধ্যে পশ্চিমবঙ্গ এক নম্বরে। আয়তনে তেরো নম্বরে।

অথচ দেখুন পশ্চিমবঙ্গে দেশের অন্যতম বাণিজ্যিক শহর কলকাতা আছে। দেশের ৬ টি বাণিজ্যিক নগরী যেই যেই রাজ্যে আছে, যথা মুম্বই (মহারাষ্ট্র-প্রতি জনগনভিত্তিক ধনবন্টনে ৬ নং), দিল্লি (কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল - ৩ নং), চেন্নাই (তামিলনাড়ু -১২ নং), আহমেদাবাদ (গুজরাত -৯ নং) এবং ব্যাঙ্গালুরু (কর্ণাটক-১৩ নং) তারা সকলেই আমাদের রাজ্যের উপরে। সবথেকে মজার কথা হল এই যে, এই রাজ্যগুলিতে নগরের সংখ্যাও পশ্চিমবঙ্গের থেকে বেশি। নগর বলতে দশ লক্ষের বেশী জনবসতি সম্পন্ন এলাকা যদি আমরা ধরি। পশ্চিমবঙ্গে এমন জায়গা কলকাতা ছাড়া আছে শুধু আসানসোল। মহারাষ্ট্রে আছে ৪ টি। মুম্বই, পুনে, নাগপুর আর নাসিক। গুজরাতে ৪টি, আমেদাবাদ, বরোদা, রাজকোট আর সুরাত। তামিলনাড়ুতে চেন্নাই, কোয়েম্বাতুর আর মাদুরাই। কর্ণাটকে ব্যাঙ্গালুরু, বেলগাঁও আর মাইসোর।

অতএব আমি কি বলতে চাইছি? আমাদের রাজ্য দেশের সবথেকে ঘন জনবসতি সম্পন্ন হয়েও মোটে দুটি শহরের মালিক। কেন? কেন বর্ধমান, শিলিগুড়ি, দূর্গাপুর, বহরমপুরে পাঁচ লাখেরও কম লোক বাস করেন? দেশের অন্যতম বড় কয়লাখনি এলাকা থাকা সত্তেও?

পশ্চিমবঙ্গের ৬২% চাষযোগ্য জমি। তা সত্তেও ৫২% GDP Contribution Service Sector থেকে আসে কেন?

কেন আমলাশোলে মানুষ না খেতে পেয়ে মারা যায়? কেন দার্জিলিং-এ বছরের পর বছর অশান্তি চলে? কেন বকখালিতে অতবড় সমুদ্র সৈকত থাকতেও লোকে সেই কবে বিধান রায়ের করা, বর্তমানে প্রায় সমুদ্রগর্ভে লীন দীঘাতে যায়?কেন বাঁকুড়া, পুরুলিয়া, বীরভুম এত অনুন্নত?

কেন সিঙ্গুরে টাটার কারখানা হয় না? কেনই বা অধিকৃত জমিতে চাষও হয় না? কেন জিন্দালের কারখানা শালবনীর মত বিপজ্জনক এলাকায়? সাধারন মানুষের মরণ কেন মাওবাদীদের মাইনে?

এক একটা রাজনৈতিক ভুল সিদ্ধান্ত আর কত দিন আমাদের জীবন পিছিয়ে নেবে কুড়ি কুড়ি বছরের পরে?

প্রশ্নগুলি সহজ, আর উত্তরও তো জানা। তাও "কবার তুমি অন্ধ সেজে থাকার অনুরাগে/বলবে তুমি দেখছিলেনা তেমন ভালো করে?"

Sunday, April 25, 2010

চরৈবেতি

লিখতে বসলেই সব আস্তে আস্তে গুলোতে থাকে। সেই মহীন গেয়ে গেছে কবে, "কত কি করার আছে বাকী"। তেমনি যখন ভাবি লিখবো, তখন একসাথে এত কথা চলে আসে যে সব গুছিয়ে বলা ভারি দায়।

আজ একটা হিন্দুস্থানী শাস্ত্রীয় সংগীতের অনুষ্ঠানে গেছলুম। নিত্যানন্দ হলদিপুর এসেছিলেন। রাত দশটাতে বাঁশীতে সমস্ত পৃথিবীর দুঃখ ভরে কাফি ঠাটে ধরলেন মিশ্র পিলু। কোমল আর শুদ্ধ গান্ধারের টানাপোড়েনে বরোদার সন্ধ্যা সার্থক হলো। তার আগে বাজিয়েছেন পুরিয়া। বাজছে আর আমার মনে বেজে যাচ্ছে রবি ঠাকুরের পুরবীতে বাঁধা গান, "বেলা গেল তোমার পথ চেয়ে"।

আরো মনে পড়ল মুজতবা আলীর কথা। বরোদায় এক ঘরোয়া সান্ধ্য অনুষ্ঠানে তিনি শুনেছিলেন ওস্তাদ ফৈয়াজ খাঁ সাহেবের মিঁয়া মল্লার। বরোদার কাঠফাটা গরমের সন্ধ্যাতে সেদিন গান শেষে নেমেছিল বৃষ্টির ধারা। সবাই ধন্য ধন্য করেছিল, কেবল ওস্তাদ বসেছিলেন পাথরের মত। সবাই চলে গেলে তিনি কাতর গলায় আলী সাহেবের হাত ধরে বলেছিলেন, "আমার কি সে ক্ষমতা আছে?" তার উত্তরে আলী সাহেব ভারী চমৎকার বলেছিলেন যে তা তিনি জানেন না, কিন্তু আজ ভগবানও খাঁ সাহেবের মান রাখতে কার্পণ্য করেননি। একথাটাও হাড়ে হাড়ে সত্যি যে, সাধনা মানুষকে যে স্তরে উন্নীত করে, সেই স্তরে যাওয়ার কোনো শর্টকাট হয় না।

আজ আর রাজনীতির কথা লিখব না। তা লিখতে হয় রাগ নিয়ে, মনের ক্ষোভ নিয়ে, না পাওয়ার দুঃখ নিয়ে। বঞ্চনার সাতকাহন ছাড়া সেই ফুল্লরার বারমাস্যা পূর্ণ হয় না। আজ মিশ্র পিলু সব কিছুর উপরে জল ঢেলে দিয়ে গেছে।

কিছু কথা বা পাগলের প্রলাপ

আমি আগে রোজনামচা লিখতুম। সে অনেক আগে। প্রথম লেখা শুরু করি যখন আমি পড়তুম ষষ্ঠ শ্রেণীতে। যাকে বলে ক্লাস সিক্স। সেভেন বা এইটে কেটে গেলো সেই প্রেমের সুতো। তার পরে লেখা শুরু করি আবার কলেজে উঠে। টানা তিন বছর লিখেছিলুম। প্রেমের প্রতি ছিলো ভয়ানক অভক্তি। শেষ করি জীবনে প্রথম বার প্রেমে পড়ার পরে। তারও কারণ ছিলো। নিজের ডায়রির পাতা উল্টোলে নিজেকে চিনতে অসুবিধা হতো ভারি। এতো পরস্পর বিরোধী কথা লিখতাম কয়েকদিন বাদে বাদেই, যে ডায়রি না ক্যালাডাইস্কোপ বোঝা দুস্কর হয়ে পড়ত।

এখন বুঝি, সেটাই ঠিক ছিলো। সেই সময়টাই ছিলো অন্য রকম। এখন সেদিকে তাকালে, সাদা-কালো ছবি ভরা অ্যালবামের গন্ধ পাই। আমার বাবা আর মার বিয়ের ছবির একটা অ্যালবাম আছে। সাদা-কালো ছবিতে ভরা। সেই রকম। তাতে চার কোনাতে চারটে তিন কোনা খাপ মতন থাকতো। তাতে ছবিটা আটকে দিতে হতো।আর নীচে ছিলো ভেলভেট কাগজের পাতা। দুটো পাতার মাঝে থাকত ট্রেসিং পেপারের ব্যবধান। ছবিটা খারাপ হওয়া শুরু হতো ওই চারটে কোণা থেকে। মাঝখানটা থাকতো পরিপাটি। অতীতটাও অনেকটা ঐ রকম। চার পাশের ডিটেইলস ক্রমে ধুসর হতে থাকে, কেবল মাঝখানের গল্পটা পরিষ্কার।

প্রথম প্রেমে পড়া আর শেষ প্রেমে পড়া, ওই একবারই। দুবার বেলতলা যায় পাগলে। আর আমার এক বারেই তীর্থদর্শণ হয়ে গেছে। তার পুণ্যশ্লোকের রেশ এখনো আমি বয়ে চলেছি, ঠিক যেভাবে ভরত বয়ে বেড়াতেন রামের চপ্পল।

মাঝে মাঝে ভাবি, যদি লিখতে পারতাম একটা ল্য'ক্যুজ। জোলার মতন। লেখাটা খুব দরকার। অন্তত পশ্চিমবঙ্গের জন্য। আর লেখা দরকার শ্যাম বা কুল কাউকেই না রেখে। ওখানে এখন বুদ্ধিজীবি সম্প্রদায়ও হয় শ্যামের দলে, নইলে কুল রাখতে ব্যস্ত।

শিবরাম চকরবরতির একখান বই আছে, নাম "ঈশবর (আমার বাংলা লেখার নরমকলে আবার ব-ফলা ঠিক-ঠাক আসে না) পৃথিবী ভালোবাসা"-তাতে আছে। শিব্রামের বাবা একদিন গাছতলাতে মলত্যাগ করতে বসেছেন, কুল গাছতলাতে। আর সমীপে, গ্রামে আসা যাত্রাদলের এক সখীর ভূমিকায় নামা গোঁফ কামানো ছোকরা। এদিকে গাছ থেকে পড়েছে একটা কুল। উনি লোভ সামলাতে না পেরে টপ করে দিয়েছেন সেটাকে মুখে পুরে। তারপরে রাতে তো বসেছে যাত্রা। শ্যামলালের উপরই কিছু (সুকুমার রায়ের নয়, সেই যে "উঠানে বাখানি করি নেচেছিলো কাল, তারপরে কি হইল জানে শ্যামলাল" সেটা নয়)। তাতে ছোকরাটা যথারীতি সখি সেজে নাচ-গান করছে। করতে করতে হাত ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে গেয়েছে, তোমার কুলের কথা কয়ে দেব। ব্যস, বাবা মশায়ের চোখ কপালে। সমানে প্যালা দেওয়া শুরু। ব্যাটাকে চুপ করানো ভারী প্রয়োজন। টাকা-কড়ি, সোনার ঘড়ি, চেন সব গেল। ছোকরা তো আনন্দে আত্মহারা। খালি আসে, নাচে আর বাবামশায়ের সামনে হাত ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে গায়, "তোমার কুলের কথা কয়ে দেব।"শেষ-মেষ সবই যখন গেল, তখন ভদ্রলোক রেগে মেগে পরনের কাপড়টা খুলে ছোকরার হাতে দিয়ে বললেন, "ক, কি কবি ক। হাগতে বসে একটা কুল খেয়েছি, এই তো -" বলে দিগম্বর হয়ে সভা থেকে বেড়িয়ে গেলেন।

আমার তো মনে হয়, হাল এই রকমি। সাহেবরা শ্যামলীলাও দেখেন আর কুলের কথাও ঢাকেন। আমার মনে হয়, অন্তত কবীর সুমন আমাকে কিছুটা সাপোর্ট করবেন। সুনীল গাঙ্গুলী বা সৌমিত্র চ্যাটার্জী করলেও ভালোই।এই সব কি যাদের হাতে তলোয়ারের থেকেও ভারী যন্তর, যারা রামমোহন, বিদ্যাসাগর, রবি ঠাকুরের বংশধর তাদের মানায়? তবে "কেউ রাজী না হলেও কিছু যায় আসে না।"

রাত হয়ে গেছে। শুয়ে পড়ি। এই সব পেট খারাপের পূর্ব লক্ষণও হতে পারে।