এই লেভেল ক্রসিং শব্দটা মনের মধ্যে দুম করে একটা পাগলাঘন্টি বাজাতে বাজাতে চলে গেল। এক ঝলকে মনে পড়ল আমাদের ১২ নং রেলগেটের কথা। যখন স্কুল থেকে হাফ প্যান্টুলুন পড়ে গনেশদার হজমি (মাত্র ১০ পয়সাতে দুটি ছিল তখন সেই অমৃতবটিকা) চাটতে চাটতে হেঁটে হেঁটে পার হতুম সেই রেলগেট, তখন সেখানে তুমুল যানজট। এক এক দিন আবার মালগাড়ির সাইডিং থেকে লরি বের হত সেই লেভেল ক্রসিং-এ। পৌনপৌনিকের মতো। সে ভারী পাঁচমিশেলি পরিস্থিতি। রিকশাতে বসা, কপালে দইয়ের ফোঁটা মাখা পরীক্ষার্থী পড়ত ডিসিশন ট্রীর তুমুল চক্করে। বাকীটা কি তবে হেঁটে যাবে? এখনো দৌড়লে হয়তো ঘন্টা পড়ার পাঁচ মিনিট আগে ;- সাইকেল রিক্সা, সাইকেল ভ্যান (তখন যদিও তাতে মানুষের থেকে মালই বেশি চাপত), অ্যামবাসাডার, লরি, বাস, আর আমাদের ১০ ফুট চওড়া লেভেল ক্রসিং।
শান্তিনিকেতনে প্রথমবার যাই, ক্লাস এইটে, বাবার সাথে। শান্তিনিকেতনে ২য় বার যাওয়া উচ্চ মাধ্যমিক দিয়ে। তার গল্প সুনীল গাঙ্গুলীর অরণ্যের দিনরাত্রির থেকে কম রোমাঞ্চকর নয়। তার কথা হয়তো আরো পরে হবে।
তখন দেখেছিলুম, সেই শান্তিনিকেতনে। দুবরাজপুর বা সিউড়ির বাসের মাথাতে ঝোলা লোক ফেভিকলের বিজ্ঞাপনকেও হার মানায়। আর দেখেছিলাম, সত্যি সত্যি, "সাঁওতালী বঁধুয়ার খুলে যাওয়া বুকের আঁচল"। আমরা চার বন্ধু হোটেল থেকে বেরিয়ে কোন গলিঘুঁজি উপচে বসেছি একটা পুকুর পাড়ে। সেখানে দেখেছিলাম। ওটা বোধ হয় মেয়েদেরই স্নানের ঘাট ছিলো। ওরাও আমাদের দেখেছিল। ২-৩ মিনিট ইতস্তত করে, তারপরে বাচ্চা ভেবে বোধহয় আর পাত্তা দেয়নি। আমরা তো অবাক। তারপরে কৌতুহলি আর তারো পরে প্রবল ভীত।৩ মিনিটের মধ্যে আমরা পুকুর পাড় ছেড়ে দৌড়তে শুরু করলাম, আর সেটা ভয়ে। কেউ কিছু বলেনি তো। তাও। ছুটতে ছুটতে কখন দেখি ঢুকে পড়েছি বিশবভারতীর ভিতরে। কোনো পাঁচিল-টঁআচিল কিচ্ছু ছিলনা।
আমার এখন মনে হয়, শান্তিনিকেতনের সেই ঘটনাই আমাদের চার জনের জীবনে এই চরম Innocence এর সামনে Innocence lost। সহজ সরল সাদামাটা জিনিসকে জটিল করা কি তখন থেকে শুরু নয়?
সাধে কি বলে যানজট আর লেভেল ক্রসিং?
No comments:
Post a Comment