আসলে কলকাতা ঠিক selfish নয়। কলকাতা নয় প্রাদেশিকও। কলকাতা আসলে নিস্পৃহ। এই জড়তা কেন এসেছে তার বিশ্লেষণ করা অত্যন্ত দরকার। হয়তো এসেছে চুড়ান্ত রাজনৈতিক অস্থিরতার পরে, ৩০ বছরের রাজনৈতিক স্থিতাবস্থা থেকে। আমি এই সেদিন অবধি একটু বয়স্ক লোকেদের বলতে শুনেছি, "তোরা তো কংগ্রেসি আমল দেখিসনি, তার থেকে এখন অনেক ভালো।" সবকিছুর পিছনে হয়তো এখনো কাজ করে নকশাল আমলের ৫ বছরের ডামাডোল। বছরের পর বছর যখন হুগলী, টিটাগড়, হাওড়াতে লক্ষ লক্ষ কল কারখানা বন্ধ হয়েছে। শুধু ছোট ছোট নয়, জেসপ, বর্ন অ্যান্ড শেফার্ড, ডানলপ-এদের মত বিশাল নাম মুখ থুবড়ে পড়েছে। আমার বাবা যে কোম্পানীতে কাজ করতেন, ৯৪-৯৫ সালে তার মুল কারখানাটা বন্ধ হয়ে যায়। বাবার ৪-৫ মাস কোনো কাজ ছিলনা। এখন বুঝি, সেই সময় ভদ্রলোকের চোখের সামনে অন্ধকার ছাড়া কিছু ছিল না। শুধু শিল্প নয়, শিক্ষাতেও।
আমি যেই স্কুলে পড়েছি, তা আমার ছোট্ট শহরের সব থেকে গর্বিত স্কুল ছিল ১৯৮৮ সালে। ২০০০ সালে সেখান থেকে যখন পাশ করে বের হই, তখন সেই বোধ ধূলিধুসর হতে শুরু করেছে। আজ আমার সহপাঠীর ছোট্ট একটি উত্তরাধিকার এসেছে। তাকে জিজ্ঞাসা করলাম, ছেলেকে আমাদের স্কুলেই পড়াবে কি? সে বলল, আমাদের সময় অন্য ছিল। আজ আমার ১৬৪ বছরের পুরোনো স্কুল, আমার alma mater, আমার মাতৃতুল্য বিদ্যালয়, প্রতিযোগীতায় হেরোর আসন নিয়েছে। আমাদের উত্তরাধিকারদের কোল দেওয়ার যোগ্যতা হারিয়েছে। কলকাতা বিশববিদ্যালয় প্রায় ম্যামথ সমতুল্য। উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে যাদবপুর যেটুকু ধরে রেখেছে তাও।
সব দেখেছি আমরা। সব হয়েছে আমাদের চোখের সামনে।তাও সেই বার বার , নিস্পৃহতার অজুহাতে, কিছু করবনা বলে, সেই বব ডিলনের গানের মত, "How many times must a man turn his head and pretend that he just doesn't see" হয়ে থেকেছি। আমাদের দেখলে, ভদ্রলোক হয়ত গানটাও লিখতেন না। ভাবতেন, এটাই সবাভাবিক।
রূপমের শেষ পংতি কটি ভারী সুন্দর। "আত্মসম্মান ফিরিয়ে দিতে চেষ্টা করুন সেই পুর-প্রতিনিধি, যার তুচ্ছ ওই একটা ভোট না পেলেও হয়তো দিব্যি চলে যায়। এমন কোন মানুষ, এমন কোন রাজনীতিক কি আছেন আমার মাতৃভূমিতে? থাকলে এগিয়ে আসুন, আমরা সবাই মিলে তাঁকে বরণ করে নেব নিজের মনের ভিতরের সমস্ত শ্রদ্ধা, ভালোবাসা, বিশবাস আর প্রত্য্য দিয়ে।
No comments:
Post a Comment