Tuesday, July 5, 2011

সে বড় সুখের সময় নয় ........

সে বড় সুখের সময় নয়, সে বড় আনন্দের সময় নয়....তখনি পা থেকে মাথা পর্য্যন্ত টলমল করে, দেয়ালে দেয়াল, কার্নিশে কার্নিশ, ফুটপাথ বদল হয় মধ্যরাতে.” – শক্তি চ্যাটার্জী

বরোদাতে আমাদের কয়েকজনের ছোট্ট একটি ব্যান্ড আছে. যার নাম কাইরন. আমরা মূলত চেষ্টা করি, যাতে পরবাসে থেকেও আমরা যতটা সম্ভব বাংলার বর্ত্যমান সঙ্গীতের ধারাকে বরোদাতে অব্যাহত রাখতে পারি এবং তার সাথে সাথে যতদুর সম্ভব বরোদাতে সাধারণ বাঙালি শ্রোতাকে এবং শিল্পীদের নিয়ে একত্রিত করে বাংলা থেকে বহু দুরে একটি ছোট্ট বাংলা সৃজন করতে পারি. এ বিষয়ে বরোদার একটি অন্যতম বৃহত সংগঠনের অভিভাবকত্ত্ব আমরা পেয়েছি, আমরা তাকে ধন্যবাদ জানাই. বরোদাতে আরো বিভিন্ন মানুষ এবং বিভিন্ন সংগঠন বিভিন্ন ভাবে কাজ করে চলেছেন বাংলা এবং বাঙালি সংস্কৃতির ক্রম প্রচারের জন্য. তাদের আমাদের প্রণাম.

তো এইভাবে সুখে দিন যাপনের মাঝে সম্প্রতি আমাদের কাছে একটি অনুষ্ঠান করার প্রস্তাব আসে. এই উদ্যোক্তাদের থেকে আমরা আগেও ডাক পেয়েছি এবং তাঁরা বহুদিন ধরে বরোদাতে বাংলা সংস্কৃতির প্রচারে যত্নশীল বলে তাঁরা দাবী করে থাকেন. আমাদের তাদের সম্পর্কে পূর্ব অভিজ্ঞতা ছিল এবং তাতে সামান্য যদি কিন্তুর অবকাশ থাকলেও আমরা তা বরাবর খুব যত্ন সহকারে অবজ্ঞা করে এসেছি. তাঁরা যে বিশাল পরিসরে তিন দিন ব্যাপী কলকাতার বিশিষ্ট নাট্য ব্যক্তিত্বদের নিয়ে অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন, তাতে সামান্য উনিশ বিশ হওয়া অসম্ভব নয়. আমাদেরও নিজস্ব একটা দায়িত্ব থাকে এবং বরাবর থাকবে যারা এই রকম কোনো উদ্যোগে নিজেকে নিয়োজিত করছেন তাঁদের পাশে দাঁড়ানো. আমাদের প্রত্যেকটি অনুষ্ঠানের পিছনে বেশ কিছু খরচ খরচা থেকে যায়, কারণ আমাদের যে পরিকাঠামো রয়েছে, তার যাতায়াতের জন্য, এবং তা ছাড়াও, যদি কোনো পেশাদারী শিল্পী আমাদের সাথে বাজান, তাঁর জন্য একটি যথা সম্ভব সাম্মানিকের ব্যবস্থা করার প্রয়োজন থাকে. তা সত্ত্বেও যখন আমাদের কাছে এই প্রস্তাবটি আসে, তখন আমরা এক কথাতে কোনো রকম কোনো পারিশ্রমিক ছাড়াই অনুষ্ঠান করতে রাজী হই, শুধুমাত্র তাঁদের উদ্যোগকে আমাদের পক্ষে যতটুকু সম্ভব সাহায্য করা সম্ভব, তার জন্য.

আমি জানি না, তাঁরা আমাদের এই ভদ্রতাকে আমাদের দুর্বলতা বলে দেখলেন কি না. প্রথম প্রতিবন্ধকতা আমরা পেলাম শব্দের প্রয়োজন জানাতে গিয়ে. আমাদের মতো একটি গানের দল, যারা মূলত বৈদ্যুতিন যন্ত্র সহযোগে গান করে, তাদের একটা ন্যুনতম শব্দের (ধ্বনি)প্রয়োজন থাকে. আমরা সেই প্রয়োজন জানানোর পরে বহু সময় অবধি দেখছি, দেখবো, হচ্ছে হবে করে শেষ সময়ে বলা হলো, যেহেতু এটি মূলত নাটকের অনুষ্ঠান, শব্দ প্রক্ষেপণে এরূপ বাহুল্য (!) সম্ভব নয়. আমরা যেন ঠিক করে জানাই আমরা অনুষ্ঠান করতে ইচ্ছুক কি না, নইলে তাঁদের অন্য ব্যবস্থা দেখতে হবে. যাঁর কাছ থেকে আমরা এই বার্তা পাই, তিনি আমাদের অত্যন্ত কাছের মানুষ. আমরা নির্দ্বিধায় তাঁকে ফোন করি, এবং তাঁকে বলি, আমাদের ন্যুনতম প্রয়োজন এটাই এবং এটা না হলে আমরা অনুষ্ঠান করতে পারবো না. তিনি আমাদের বলেন, তিনি তাঁর যথা সাধ্য চেষ্টা করবেন. তিনি তা করেছেন এবং যা প্রতিশ্রুত তার থেকে কিছু বেশিই করেছেন. আমরা তাঁকে ধন্যবাদ জানাই.

অনুষ্ঠানের দিন, অর্থাৎ ২রা জুলাই, আমাদের বলা হয় একটু তাড়াতাড়ি প্রেক্ষাগৃহে পৌছে যেতে, কেননা, আমাদের আগেই বলা ছিল যে আমাদের যন্ত্রপাতিগুলির সম্পুর্ন শব্দ মিলিয়ে নিতে কিছুটা সময় লাগবে. উদ্যোক্তারা জানান তাঁরা ঠিক ৭-৩০ মিনিটে অনুষ্ঠান শুরু করতে চান. আমরা আমাদের সমস্ত যন্ত্রপাতি নিয়ে সন্ধ্যা ৬-৩০ টার মধ্যেই সি সি মেহতা প্রেক্ষাগৃহে পৌছে যাই. এর পরে যা হয় তা আমাদের যেমন এখনো অবাক করছে, তেমনি দুঃখও দিয়েছে. আমরা কেউই পেশার জন্য গান করি না এবং যার যার ক্ষেত্রে সামান্য হলেও কিছু কিছু শিক্ষা লাভ করে আমরা যার যার ক্ষেত্রে একটা সামান্য হলেও জায়গাতে দাঁড়িয়েছি. এদিনের ঘটনা আমাদের সেই শিক্ষাকে চরম আঘাত করেছে. আর আমরা যে সামান্য গান বাজনা করি, তাতে আমরা যে একটা বিশেষ কিছু, সেই রকম দাবী আমরা একদমই রাখি না. তবে এর দৌলতে আমাদের বেশ কিছু মানুষের কাছে আসার সৌভাগ্য হয়েছে. তাদের কাছে আমরা শুধু গান বাজনাই শিখি নি, আমাদের যা সামান্য সংস্কৃতির শিক্ষা, তাও তাঁদের কাছে. তাঁরা গোটা রাজ্যে এবং দেশে তাঁদের নিজ ক্ষেত্রে প্রবাদপ্রতিম. আমাদের মতো অর্বাচীনদের পরম সৌভাগ্য তাঁদের কাছে শিক্ষা লাভ করা. এখানে তাঁদের নাম বলে, তাঁদের ছোট করার ধৃষ্টতা আমি করবনা. তাঁরা আমাদের শিখিয়ে ছিলেন, শিল্পী যতই ছোট হোক, তিনি শিল্পী. সর্বদা তাঁর প্রাপ্য সম্মান তাঁকে দিতে হয়. আমার নিজের গুরুকে দেখেছি, দশ বছরের একটি ছোট ছেলে, শিখতে এসেছে একদমই নতুন. তিনি তার সাথে এমন আদরে কথা বলছেন, যেন সে তাঁর সমমানের শিল্পী. আর সেদিন আরেকটুর জন্য আমাদের বলা হয় নি ;- “ওহে, এতক্ষণ যে এস্টেজে দাঁড়িয়ে গান করলে, ঝাঁটটা দেবে কে?”

Sunday, May 30, 2010

মাও সে তুং ও জ্ঞানেশবব্রি কুরলা সুপারফাস্ট এক্সপ্রেস

আমি এই লেখাটা যখন লিখতে শুরু করলাম, তার ঠিক আটচল্লিশ ঘন্টা আগে খড়গপুর থেকে ২৮ কি মি দূরে সাতটি উলটানো রেলের কামরা ছিল। আর তার উপর দিয়ে চলে গেছিল এক মালগাড়ির নিরুপায় লং মার্চ। মানুষ ছিলেন অসহায়। মৃত্যুর সাথে পাশা খেলার সময় সমাজতন্ত্র বা ধনতন্ত্র, কেউ তাদের পাশে ছিল না। শুধু ছিল অন্ধকার রাত্রি, সাতটি তারার তিমির আর সাতটি উলটানো রেলের লাইনচ্যুত বগি। মানুষগুলি চলে গেলেন কোন সুদুর রাস্তা দিয়ে, কত দুরের পথ চলা বাকী রেখে, আরো কোন অজানা পথে চলতে তা কেই বা জানে।

এ আপনারা কি করলেন কমরেড? মাও যখন লং মার্চ করেছিলেন, তার সাথে আমরা সবাই হেঁটে ছিলাম। আমরা সবাই, চীনের, আবাল-বৃদ্ধ বনিতা। হেঁটে ছিলাম এক সবপ্নের দেশের জন্য। হেঁটে ছিলাম এমন এক সময় দেখতে যখন আমলাশোলে আর কেউ না খেয়ে মারা যাবে না। রেড বুকে মাও যখন বলেছিলেন, "বন্দুকের নলই ক্ষমতার উৎস", তখন আমরা তো কখনো ভাবিনি, সেই নল আপনারা ঘুরিয়ে দেবেন আমাদের দিকেই।

কমরেড আপনারা রাজনীতি করছেন, বিপ্লব নয়। বিপ্লব করেছিলেন সেই একলা মানুষ, যিনি দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে এসে, হাতে বন্দুক তো দূর, লাঠিটিও না তুলে(আক্রমণার্থে), সমস্ত দেশকে পাশে নিয়ে, যিনি কাঁপিয়ে দিয়েছিলেন সমস্ত বৃটিশ সাম্রাজ্যবাদের ভিত। বিপ্লব করেছিলেন সেই একলা মানুষ, যিনি একা দেশ থেকে বেরনোর চার বছরের মধ্যে ফিরে ছিলেন দেশে একদল সিংহবিক্রম জওয়ানের সাথে, তাদের সর্বাধিনায়ক হয়ে। বিপ্লব করেছেন সেই মানুষ, যিনি কিউবাতে আরামের সমাজতান্ত্রিক রাজনীতি ছেড়ে ছুটেছিলেন বলিভিয়াতে, চিরনিদ্রায় শায়িত হতে। তারা বিপ্লবী ছিলেন, সবপ্ন দেখেছিলেন কমরেড, রাজনীতি করেননি।

কমরেড, আমি আপনাদের দিকে আঙ্গুল তুললাম। আপনারা দোষী। আপনারা হত্যাকারী। শুধু ২০১০ সালে আপনাদের এটি নয় নম্বর আঘাত ছিল। শাসনব্যবস্থার বিরুদ্ধে নয়, আমার মত সাধারন মানুষের বিরুদ্ধে। আমি এবারে গুজরাত থেকে কলকাতা ফিরতে হলে কোন রাস্তা দিয়ে ফিরব? আমার বাবা কাল প্রশ্ন করেছিলেন আমাকে, "তুমি যে ট্রেনে আসবে আগামী জুনে, তা কি এই লাইন দিয়েই আসে?" বলুন কমরেড, আমি তাঁকে কি উত্তর দেব? তাঁর বয়স হয়েছে। আর আমার দুর্ভাগ্য আমি যে দেশে বসবাস করি সেই দেশে ঘোষিত "সর্বাধিক বৃহৎ আভ্যন্তরিণ সুরক্ষা বিপর্য্যয়ের" বিরুদ্ধে রাষ্ট্র বা রাজ্য কেউই কোন পদক্ষেপ নেয় না। আমেরিকা হলে এতদিনে সেনা নেমে আপনাদের নির্মূল করে দিত। হাজার হোক, ক্যাপিটালিস্টিক অর্থনীতি।

ভবিষ্যত আপনাদের মনে রাখবে কমরেড, যেমন মনে রেখেছে হিটলারের গেস্টাপো বাহিনীকে বা মুসোলিনীর ফ্যাসিস্ট বাহিনীকে। আপনারা নিশ্চিন্ত থাকুন। আর এও জেনে নিন, বর্তমান আপনাদের ঘেন্না করে।দেশের সাধারন ৯৯% মানুষ, যারা নিজের দিন আনে, দিন খায়, আর নিজের পরিশ্রমের বিনিময়ে নিজের পরিবারের মুখের হাসিটুকু দেখতে ভালোবাসে, তাদের প্রতিনিধি হয়ে আমি বলছি, তারা আপনাদের ঘেন্না করে। আপনারা কাদের জন্য সমাজতন্ত্র আনবেন কমরেড?

Wednesday, May 19, 2010

মরুদ্যান নাকি ওটা মরুভুমি

আজ আনন্দবাজারে রুপম ইসলামের লেখাটা পড়লাম। রুপম লিখেছেন আমাদের শহরে প্রবাসীদের প্রতি শহরের বিমাতৃসুলভ ব্যবহার নিয়ে। লিখেছেন বছরের পর বছর গড়ানো নিরুপায় সমস্যার পুনরাবৃত্তি, উদাসীনতা এবং অদ্ভুত রকমের চরম নিস্পৃহতা নিয়ে। লেখাটা পড়ে অদ্ভুত লাগল। এও কি হয়? শেক্সপীয়র সরণীর মত জায়গাতে বছরের পরে বছর জল নেই? যখন বাল ঠাকরে বা রাজ ঠাকরে গর্জে ওঠেন "আমচি মুম্বই' তখন তো আমরা কলকাতাতে বসে চায়ের কাপে চুমুক দিতাম আর বলতাম, কলকাতাতে এমন হয় না। বরং কত বড় মানুষ কলকাতাকে ভালবেসে কাটিয়ে দিয়েছেন তাদের জীবন। ভগিনী নিবেদিতা, মাদার থেকে আজও তো ঊষা ঊত্থুপ কলকাতা বলতে অজ্ঞান।

আসলে কলকাতা ঠিক selfish নয়। কলকাতা নয় প্রাদেশিকও। কলকাতা আসলে নিস্পৃহ। এই জড়তা কেন এসেছে তার বিশ্লেষণ করা অত্যন্ত দরকার। হয়তো এসেছে চুড়ান্ত রাজনৈতিক অস্থিরতার পরে, ৩০ বছরের রাজনৈতিক স্থিতাবস্থা থেকে। আমি এই সেদিন অবধি একটু বয়স্ক লোকেদের বলতে শুনেছি, "তোরা তো কংগ্রেসি আমল দেখিসনি, তার থেকে এখন অনেক ভালো।" সবকিছুর পিছনে হয়তো এখনো কাজ করে নকশাল আমলের ৫ বছরের ডামাডোল। বছরের পর বছর যখন হুগলী, টিটাগড়, হাওড়াতে লক্ষ লক্ষ কল কারখানা বন্ধ হয়েছে। শুধু ছোট ছোট নয়, জেসপ, বর্ন অ্যান্ড শেফার্ড, ডানলপ-এদের মত বিশাল নাম মুখ থুবড়ে পড়েছে। আমার বাবা যে কোম্পানীতে কাজ করতেন, ৯৪-৯৫ সালে তার মুল কারখানাটা বন্ধ হয়ে যায়। বাবার ৪-৫ মাস কোনো কাজ ছিলনা। এখন বুঝি, সেই সময় ভদ্রলোকের চোখের সামনে অন্ধকার ছাড়া কিছু ছিল না। শুধু শিল্প নয়, শিক্ষাতেও।

আমি যেই স্কুলে পড়েছি, তা আমার ছোট্ট শহরের সব থেকে গর্বিত স্কুল ছিল ১৯৮৮ সালে। ২০০০ সালে সেখান থেকে যখন পাশ করে বের হই, তখন সেই বোধ ধূলিধুসর হতে শুরু করেছে। আজ আমার সহপাঠীর ছোট্ট একটি উত্তরাধিকার এসেছে। তাকে জিজ্ঞাসা করলাম, ছেলেকে আমাদের স্কুলেই পড়াবে কি? সে বলল, আমাদের সময় অন্য ছিল। আজ আমার ১৬৪ বছরের পুরোনো স্কুল, আমার alma mater, আমার মাতৃতুল্য বিদ্যালয়, প্রতিযোগীতায় হেরোর আসন নিয়েছে। আমাদের উত্তরাধিকারদের কোল দেওয়ার যোগ্যতা হারিয়েছে। কলকাতা বিশববিদ্যালয় প্রায় ম্যামথ সমতুল্য। উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে যাদবপুর যেটুকু ধরে রেখেছে তাও।

সব দেখেছি আমরা। সব হয়েছে আমাদের চোখের সামনে।তাও সেই বার বার , নিস্পৃহতার অজুহাতে, কিছু করবনা বলে, সেই বব ডিলনের গানের মত, "How many times must a man turn his head and pretend that he just doesn't see" হয়ে থেকেছি। আমাদের দেখলে, ভদ্রলোক হয়ত গানটাও লিখতেন না। ভাবতেন, এটাই সবাভাবিক।

রূপমের শেষ পংতি কটি ভারী সুন্দর। "আত্মসম্মান ফিরিয়ে দিতে চেষ্টা রুন সেই পুর-প্রতিনিধি, যার তুচ্ছ ওই একটা ভোট না পেলেও হয়তো দিব্যি চলে যায়। এমন কোন মানুষ, এমন কোন রাজনীতিক কি আছেন আমার মাতৃভূমিতে? থাকলে এগিয়ে আসুন, আমরা সবাই মিলে তাঁকে বরণ করে নেব নিজের মনের ভিতরের সমস্ত শ্রদ্ধা, ভালোবাসা, বিশবাস আর প্রত্য্য দিয়ে।


Thursday, May 6, 2010

বুশি আর আমি

কিছুদিন আগে একটা সিনেমা দেখেছিলাম। মার্লে অ্যান্ড মি। ওয়েন উইলসেন আর জেনিফার অ্যানিস্টন ছিল। আর সব্বাইকে ছাপিয়ে গেছিল মার্লে নামের সেই কুকুর, যে কিনা প্রথাগত ভাবে কুকুরের নামে কলঙ্ক। ব্যাটা মহা বজ্জাত। কারো একটা কথাও শোনেনা, কোনো আদব কায়দাই জানেনা, একদম পুরোদস্তুর বোহেমিয়ান।

বুশি ওর উপরেও এককাঠি।বুশিকে আনা হয় আমাদের বাড়ি যখন ওর বয়স একমাস সাত দিন।ছোট্ট সাদা তুলোর বলের মতো বুশি সারা বাড়িতে ঘুর ঘুর করে বেড়াত। আমার অন্নপ্রাশনের একটা ব্যবহার না করা বাটিতে করে ল্যাকটোজেন খেত। আর সারা ঘরে ছোট্ট ছোট্ট গোল গোল করে জলবিয়োগ করে রাখত। যখন বুশির প্রোমোশন হল ল্যাকটোজেন থেকে সেরিল্যাকে, সেদিন বাটিতে সেরিল্যাক দিতে না দিতে সব শেষ। পুরো হালুম আর হুলুম।

তারপরে বুশি আস্তে আস্তে কালের নিয়ম অনুযায়ী বড় হল। আর তেমন হতে লাগল ব্যাটার মেজাজ। বাড়ি শুদ্ধু সক্কলকে অন্তত কম করে পাঁচ বার কামড়েছে। আমাকে তো বোধহয় সবমিলিয়ে যত বার কামড়েছে তা প্রায় সেঞ্ছুরির কাছাকাছি। বেশি বই কম নয়। একবার মনে আছে, আমি আর গুবো টিভির ঘরে বসে আছি। আমি বোধহয় চেয়ারে আর গুবো আলনাতে হেলান দিয়ে মেঝেতে। বুশি গুবোর পায়ের থেকে ফুট তিনেক দূরে ঘুমোচ্ছে। আচমকা কি মনে হল, উঠে গুবোর ডান পাটাকে আচ্ছা করে মুখে পুরে কামড়ে কুমড়ে আবার যেখানে ছিল, সেখানে গিয়ে লক্ষ্মী ছেলের মত ঘুমিয়ে পড়ল। গুবো বেচারা শকের চোটে মুখ দিয়ে একটা আওয়াজো বার করতে পারে নি।

আরেকবার কামড়াল পিকুকে। বুশি তখন বারান্দাতে বসে, মন দিয়ে পিছনের পা দিয়ে ডান কানটা চুলকোচ্ছে, আর পিকু মন দিয়ে সেটা দেখছে। দেখতে দেখতে হঠাৎ পিকু হাত বাড়িয়ে গেছে দেয়ালা করতে। যেই না বলেছে, "বুশি, আয় আয় লে লে চুচু" আর যায় কোথায়- গল্পের শেষে, পিকু পাল মেডিকেল হলের সামনে বসে ইঞ্জেকশনের ভয়ে প্রবল শীতে ঠকঠক করে কাঁপছে আর দরদর করে ঘামছে, আর আমরা সব্বাই ওকে ঘিরে ভরসা দিচ্ছি, "কিচ্ছু হবে না, দু সেকেন্ডের ব্যাপার। ডেঁয়ো পিঁপড়ের কামড়েও এর থেকে বেশি লাগে।" আরেক বার জনকে তাড়া করে মাঠ পার করে দিয়েছিল।

তবে বাবাকে কখনো কামড়ায়নি। কেননা বাবার কাছে পেত সব থেকে বেশি লাই। বুশি এক জনকে কামড়াত আর বাবা এসে বলত, "কেন, তুই নিশ্চয়ই কিছু করেছিলিস?" আর অনন্যাকেও কামড়ায়নি। কেন জানি না, কিন্তু কামড়ায়নি। অনন্যার সাথে ওর সম্পর্কটা একটু অন্য রকম, একটু সম্ভ্রমই করত বোধহয়। তবে খেতে দিলে ধারে পাশে মা ছাড়া কেউ যেতে পারতনা।

আর সাংঘাতিক বুদ্ধি। কোনোদিন ওকে তেমন করে টয়লেট ট্রেইন করানো হয়নি। তবে বাইরে নির্দিষ্ট সময়ে যখন নিয়ে যাওয়া হয় তখন ছাড়া যদি বড় বা ছোটো বাইরে পায়, ব্যাটা ঠিক বাথরুমেই যাবে। আর ভগবান চাইলেন না বলে বাংলাটা বলতে পারে না। নইলে বুশির সামনে বুশির অপছন্দের কোনো কথা, বাংলাতে বলা যাবে না। ধরা যাক, সাহেব শোয়ার ঘরে আরাম করে বসে আছে, আর ওকে ওখান থেকে সরানো দরকার। বা ওর সম্পর্কে ওর সামনে যদি কেউ মনের ভুলে বলে ফেলে, "সেকি বাড়ির কুকুর, কামড়ায়, এ কী রকম অসভ্যতা।" ভগবানের অপরিসীম করুণা ছাড়া সে পায়ে পট্টি না বেঁধে, টিটেনাস ইঞ্জেকসন না নিয়ে বাড়ি ফিরতে পারত না। বুশির সামনে এমন কোনো কথা বলতে হলে আমরা বাড়ির লোকেরা কোড ল্যাঙ্গুয়েজ ব্যবহার করতাম আর নইলে ইংরেজীতে বলতাম। তাও যতটা পারা যায় শক্ত করে। মানে, "Where are you going" নয়, প্রায় "Where is the destination of thou perambulation" এর মত ইংরেজী।

তবে শেষের দিকে আর পারতনা। ভারী শান্ত আর মিষ্টি হয়ে গেছিল কুকুরটা। গত সপ্তাহে যখন ছেড়ে চলে গেল, তখন ওর চোদ্দ বছর বয়স। খাওয়া দাওয়া ছেড়ে দিয়েছিল কয়েকদিন। যেদিন স্যালাইন দেওয়া হবে ঠিক, সেইদিন সকালে উঠে বাথরুমে গেল। এসে একটু খানি বারান্দাত্তে বসল আর তারপরেই আস্তে আস্তে সময়ের ডাকে সাড়া দেওয়া শুরু। মায়া কাটিয়ে বলে যেতেও পারছিলনা। মুখে চোখে একটু জল দেওয়া হল, আর বাবা যেই একটু গায়ে মাথায় হাত বুলিয়ে দিল, ওই টুকুর অপেক্ষাতেই ছিল বোধহয়, সব শেষ।

একটা যুগ শেষ হয়ে গেল বুশির সাথে। আমার কৈশোর, এগারো-বারো ক্লাসের বাওয়াল, কলেজের প্রেম, প্রথম বাড়ির বাইরে বের হওয়া, ফিরে আসা, পুরোনো দেয়াল ভেঙ্গে নতুন দেওয়াল, নতুন ঘর-বাড়ি, পুরনো বারান্দাতে চেনে বাঁধা বুশি, নতুন বারাব্দাতে গ্রিলের গেটে মুখ দিয়ে বসা বুশি, বাবা অফিস থেকে ফিরে এলে আনন্দে প্রায় পাগল হয়ে যাওয়া বুশি, আমার সামান্য বদচলনে নিয়মিত শাসন করা বুশি, আমার বিয়েতে একটুও আওয়াজ না করে ঘন্টার পর ঘন্টা ছোট্ট ঘরটাতে বন্ধ হয়ে থাকা বুশি, আমার দোতলার ঘরে বাবার সাথে আমার ২য় বার প্রবাসে আসার পরে রোজ অনলাইনে কথা বলতে আসত। আওয়াজ করে জানান দিত ও-ও আছে। বাবা অফিস থেকে ছুটি পেয়ে গেছে এক বছর হল, আমিও আবার বাইরে এক বছর হল, সময়ও পালটে গেছে সময়ের ধর্মেই। তাও বুশি ছিল নিজের মেজাজে।

যখন বুশিকে বলা হত "চল বেড়াতে যাবো"-বুশি ছুট্টে গিয়ে সিঁড়ির উপরে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করত আমাদের জন্য। আশা করি, ওই একই ভাবে সময়ের সিঁড়ির উপরে দাঁড়িয়ে আমাদের জন্য ও অপেক্ষাতে থাকবে আবার একবার সবাই মিলে একসাথে হাঁটার জন্য।


Tuesday, May 4, 2010

যানজট আর লেভেল ক্রসিং

সম্প্রতি আমার এক বন্ধু শান্তিনিকেতন ঘুরে এল। অর্কুটে ছবি লাগিয়েছে। সেই ছবির খাতার নাম "যানজট আর লেভেল ক্রসিং"।

এই লেভেল ক্রসিং শব্দটা মনের মধ্যে দুম করে একটা পাগলাঘন্টি বাজাতে বাজাতে চলে গেল। এক ঝলকে মনে পড়ল আমাদের ১২ নং রেলগেটের কথা। যখন স্কুল থেকে হাফ প্যান্টুলুন পড়ে গনেশদার হজমি (মাত্র ১০ পয়সাতে দুটি ছিল তখন সেই অমৃতবটিকা) চাটতে চাটতে হেঁটে হেঁটে পার হতুম সেই রেলগেট, তখন সেখানে তুমুল যানজট। এক এক দিন আবার মালগাড়ির সাইডিং থেকে লরি বের হত সেই লেভেল ক্রসিং-এ। পৌনপৌনিকের মতো। সে ভারী পাঁচমিশেলি পরিস্থিতি। রিকশাতে বসা, কপালে দইয়ের ফোঁটা মাখা পরীক্ষার্থী পড়ত ডিসিশন ট্রীর তুমুল চক্করে। বাকীটা কি তবে হেঁটে যাবে? এখনো দৌড়লে হয়তো ঘন্টা পড়ার পাঁচ মিনিট আগে ;- সাইকেল রিক্সা, সাইকেল ভ্যান (তখন যদিও তাতে মানুষের থেকে মালই বেশি চাপত), অ্যামবাসাডার, লরি, বাস, আর আমাদের ১০ ফুট চওড়া লেভেল ক্রসিং।

শান্তিনিকেতনে প্রথমবার যাই, ক্লাস এইটে, বাবার সাথে। শান্তিনিকেতনে ২য় বার যাওয়া উচ্চ মাধ্যমিক দিয়ে। তার গল্প সুনীল গাঙ্গুলীর অরণ্যের দিনরাত্রির থেকে কম রোমাঞ্চকর নয়। তার কথা হয়তো আরো পরে হবে।

তখন দেখেছিলুম, সেই শান্তিনিকেতনে। দুবরাজপুর বা সিউড়ির বাসের মাথাতে ঝোলা লোক ফেভিকলের বিজ্ঞাপনকেও হার মানায়। আর দেখেছিলাম, সত্যি সত্যি, "সাঁওতালী বঁধুয়ার খুলে যাওয়া বুকের আঁচল"। আমরা চার বন্ধু হোটেল থেকে বেরিয়ে কোন গলিঘুঁজি উপচে বসেছি একটা পুকুর পাড়ে। সেখানে দেখেছিলাম। ওটা বোধ হয় মেয়েদেরই স্নানের ঘাট ছিলো। ওরাও আমাদের দেখেছিল। ২-৩ মিনিট ইতস্তত করে, তারপরে বাচ্চা ভেবে বোধহয় আর পাত্তা দেয়নি। আমরা তো অবাক। তারপরে কৌতুহলি আর তারো পরে প্রবল ভীত।৩ মিনিটের মধ্যে আমরা পুকুর পাড় ছেড়ে দৌড়তে শুরু করলাম, আর সেটা ভয়ে। কেউ কিছু বলেনি তো। তাও। ছুটতে ছুটতে কখন দেখি ঢুকে পড়েছি বিশবভারতীর ভিতরে। কোনো পাঁচিল-টঁআচিল কিচ্ছু ছিলনা।

আমার এখন মনে হয়, শান্তিনিকেতনের সেই ঘটনাই আমাদের চার জনের জীবনে এই চরম Innocence এর সামনে Innocence lost। সহজ সরল সাদামাটা জিনিসকে জটিল করা কি তখন থেকে শুরু নয়?

সাধে কি বলে যানজট আর লেভেল ক্রসিং?

Monday, April 26, 2010

এক ঝলকে

বড় আনন্দের কথা, সমস্ত রাজ্য আর কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল মিলে per capita income - এ পশ্চিমবঙ্গের স্থান ষোলো নম্বরে। আমাদের নীচে আছে ত্রিপুরা, উত্তরাঞ্চল, অরুণাচল প্রদেশ,মেঘালয়, মণিপুর, ছত্তিসগড়, ঝাড়খন্ড,আসাম, রাজস্থান, মধ্যপ্রদেশ, উত্তরপ্রদেশ, বিহার। তবে এ হল ২০০৫-২০০৬ সালের পরিসংখ্যান। Population Density -এর দিক দিয়ে দেখলে রাজ্যগুলির মধ্যে পশ্চিমবঙ্গ এক নম্বরে। আয়তনে তেরো নম্বরে।

অথচ দেখুন পশ্চিমবঙ্গে দেশের অন্যতম বাণিজ্যিক শহর কলকাতা আছে। দেশের ৬ টি বাণিজ্যিক নগরী যেই যেই রাজ্যে আছে, যথা মুম্বই (মহারাষ্ট্র-প্রতি জনগনভিত্তিক ধনবন্টনে ৬ নং), দিল্লি (কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল - ৩ নং), চেন্নাই (তামিলনাড়ু -১২ নং), আহমেদাবাদ (গুজরাত -৯ নং) এবং ব্যাঙ্গালুরু (কর্ণাটক-১৩ নং) তারা সকলেই আমাদের রাজ্যের উপরে। সবথেকে মজার কথা হল এই যে, এই রাজ্যগুলিতে নগরের সংখ্যাও পশ্চিমবঙ্গের থেকে বেশি। নগর বলতে দশ লক্ষের বেশী জনবসতি সম্পন্ন এলাকা যদি আমরা ধরি। পশ্চিমবঙ্গে এমন জায়গা কলকাতা ছাড়া আছে শুধু আসানসোল। মহারাষ্ট্রে আছে ৪ টি। মুম্বই, পুনে, নাগপুর আর নাসিক। গুজরাতে ৪টি, আমেদাবাদ, বরোদা, রাজকোট আর সুরাত। তামিলনাড়ুতে চেন্নাই, কোয়েম্বাতুর আর মাদুরাই। কর্ণাটকে ব্যাঙ্গালুরু, বেলগাঁও আর মাইসোর।

অতএব আমি কি বলতে চাইছি? আমাদের রাজ্য দেশের সবথেকে ঘন জনবসতি সম্পন্ন হয়েও মোটে দুটি শহরের মালিক। কেন? কেন বর্ধমান, শিলিগুড়ি, দূর্গাপুর, বহরমপুরে পাঁচ লাখেরও কম লোক বাস করেন? দেশের অন্যতম বড় কয়লাখনি এলাকা থাকা সত্তেও?

পশ্চিমবঙ্গের ৬২% চাষযোগ্য জমি। তা সত্তেও ৫২% GDP Contribution Service Sector থেকে আসে কেন?

কেন আমলাশোলে মানুষ না খেতে পেয়ে মারা যায়? কেন দার্জিলিং-এ বছরের পর বছর অশান্তি চলে? কেন বকখালিতে অতবড় সমুদ্র সৈকত থাকতেও লোকে সেই কবে বিধান রায়ের করা, বর্তমানে প্রায় সমুদ্রগর্ভে লীন দীঘাতে যায়?কেন বাঁকুড়া, পুরুলিয়া, বীরভুম এত অনুন্নত?

কেন সিঙ্গুরে টাটার কারখানা হয় না? কেনই বা অধিকৃত জমিতে চাষও হয় না? কেন জিন্দালের কারখানা শালবনীর মত বিপজ্জনক এলাকায়? সাধারন মানুষের মরণ কেন মাওবাদীদের মাইনে?

এক একটা রাজনৈতিক ভুল সিদ্ধান্ত আর কত দিন আমাদের জীবন পিছিয়ে নেবে কুড়ি কুড়ি বছরের পরে?

প্রশ্নগুলি সহজ, আর উত্তরও তো জানা। তাও "কবার তুমি অন্ধ সেজে থাকার অনুরাগে/বলবে তুমি দেখছিলেনা তেমন ভালো করে?"

Sunday, April 25, 2010

চরৈবেতি

লিখতে বসলেই সব আস্তে আস্তে গুলোতে থাকে। সেই মহীন গেয়ে গেছে কবে, "কত কি করার আছে বাকী"। তেমনি যখন ভাবি লিখবো, তখন একসাথে এত কথা চলে আসে যে সব গুছিয়ে বলা ভারি দায়।

আজ একটা হিন্দুস্থানী শাস্ত্রীয় সংগীতের অনুষ্ঠানে গেছলুম। নিত্যানন্দ হলদিপুর এসেছিলেন। রাত দশটাতে বাঁশীতে সমস্ত পৃথিবীর দুঃখ ভরে কাফি ঠাটে ধরলেন মিশ্র পিলু। কোমল আর শুদ্ধ গান্ধারের টানাপোড়েনে বরোদার সন্ধ্যা সার্থক হলো। তার আগে বাজিয়েছেন পুরিয়া। বাজছে আর আমার মনে বেজে যাচ্ছে রবি ঠাকুরের পুরবীতে বাঁধা গান, "বেলা গেল তোমার পথ চেয়ে"।

আরো মনে পড়ল মুজতবা আলীর কথা। বরোদায় এক ঘরোয়া সান্ধ্য অনুষ্ঠানে তিনি শুনেছিলেন ওস্তাদ ফৈয়াজ খাঁ সাহেবের মিঁয়া মল্লার। বরোদার কাঠফাটা গরমের সন্ধ্যাতে সেদিন গান শেষে নেমেছিল বৃষ্টির ধারা। সবাই ধন্য ধন্য করেছিল, কেবল ওস্তাদ বসেছিলেন পাথরের মত। সবাই চলে গেলে তিনি কাতর গলায় আলী সাহেবের হাত ধরে বলেছিলেন, "আমার কি সে ক্ষমতা আছে?" তার উত্তরে আলী সাহেব ভারী চমৎকার বলেছিলেন যে তা তিনি জানেন না, কিন্তু আজ ভগবানও খাঁ সাহেবের মান রাখতে কার্পণ্য করেননি। একথাটাও হাড়ে হাড়ে সত্যি যে, সাধনা মানুষকে যে স্তরে উন্নীত করে, সেই স্তরে যাওয়ার কোনো শর্টকাট হয় না।

আজ আর রাজনীতির কথা লিখব না। তা লিখতে হয় রাগ নিয়ে, মনের ক্ষোভ নিয়ে, না পাওয়ার দুঃখ নিয়ে। বঞ্চনার সাতকাহন ছাড়া সেই ফুল্লরার বারমাস্যা পূর্ণ হয় না। আজ মিশ্র পিলু সব কিছুর উপরে জল ঢেলে দিয়ে গেছে।